বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন
মিয়া আবদুল হান্নান,কালের খবর : মহামারী করোনাভাইরাস ঠেকাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত ও বাহরাইন থেকে অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীরা ফেরত আসা শুরু হয়েছে। বাহরাইনের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ১৫০ জন কর্মী রোববার ইফতারির আগেই খালি হাতে ঢাকায় পৌঁছেছে। আজ সোমবার কুয়েত থেকেও সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশটির একটি ছোট ফ্লাইট যোগে ১২১ জন অবৈধ কর্মী দেশে পৌঁছবে। বিমান বন্দরে ফেরত আসা কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, করোনার কারণে জেলখানা ও ডিটেনশন ক্যাম্প খালি করার অংশ হিসেবে এসব কর্মীকে ফেরত পাঠাচ্ছে বাহরাইন। এ মাসেই কুয়েতের অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে অপেক্ষমান সাড়ে চার হাজার অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীর দেশে ফেরা শুরু হচ্ছে। এসব প্রবাসী কর্মী চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এবং ভিটেমাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে কুয়েতে গিয়েছিল। অনেকেই অভিবাসন ব্যয়ের টাকাই তুলতে পারেনি। তাদের পরিবার পরিজন চরম হতাশায় ভুগছেন।
করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী গৃহবন্দি। এদের অনেকেই খাদ্য সঙ্কটে পড়ে অনাহার অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ চলতি মাসের প্রথম দিকে বর্হিবিশ্বে গৃহবন্দি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য বিদেশে ২২টি মিশনে অতিরিক্ত ৫ কোটি টাকা জরুরি বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্ত মিশনগুলোর ত্রাণ বিতরণে ধীরগতির কারণে ক্ষুধার্ত প্রবাসী কর্মীদের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। ভুক্তভোগি একাধিক প্রবাসী কর্মী এসব অভিযোগ তুলছে। সরকার সউদীর অবরুদ্ধ অসহায় প্রবাসীদের জরুরিভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ৪০ লাখ টাকা ও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে ৪০ লাখ টাকা পাঠায়। রিয়াদস্থ দূতাবাস তাৎক্ষণিভাবে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্ত জেদ্দাস্থ কনসাল জেনারেল ফয়সল আহমদের একগুঁয়েমির দরুণ সউদীর পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার অসহায় কর্মীর ত্রাণ পাওয়ার আবেদনের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ৭শ’ কর্মীর মাঝে নির্দিষ্ট পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দৈনিক ইনকিলাবে একটি খবরও ছাপা হয়েছিল। পরের দিন সিজি কয়েক জনের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন মাত্র।
কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস ঠেকাতে কুয়েত সরকার অবৈধ বাংলাদেশিদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নিয়েছে। আজ সোমবার কুয়েতের একটি ফ্লাইট যোগে ১২১জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এসব কর্মী দেশটির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে খালি হাতে দেশে ফিরছে। জেল-জরিমানা ছাড়া দেশে ফিরতে চলতি মাসের মাঝামাঝি কুয়েত পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করেছেন ৪ হাজার ৪ শ ২৮ বাংলাদেশি। প্রথমে কোনো রকম সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে এসব কর্মীদের বিদ্যুতবিহীন একটি স্কুলে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল। সেখানে খাবার ও পানির তীব্র সঙ্কটের সম্মুখীন হয় এসব কর্মী। প্রথম রোজায় অনেকের ভাগ্যে সেহরিও জুটেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে তাদের দুর্ভোগ এবং এর ধারাবাহিকতায় বিক্ষোভের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। পরে তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়।
সম্প্রতি কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের এ সংক্রান্ত নোটিশে ৩ শর্তের অন্যতম শর্ত ছিল দেশটির সরকারই অবৈধ কর্মীদের বিমান বা টিকেটের ব্যবস্থা করবে, তবে সেটি না হওয়া পর্যন্ত একটি স্থানে (প্রত্যাবাসন পূর্ব ক্যাম্পে) তাদের রাখা হবে। ওই ক্যাম্পে খাবারসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু কুয়েত সরকারই ব্যবস্থা করবে। যারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরবে তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় দেশটিতে যেতে পারবে। কুয়েত সরকারের বিমান ভাড়ায় দেশে ফেরার সুবিধায় দেয়ায় স্বেচ্ছায় ধরা দেন অবৈধ ওই বাংলাদেশিরা।